আকীদা শব্দটির অর্থ হলো “বিশ্বাসে দৃঢ়তা”। ইসলামী পরিভাষায়, এটি এমন একটি বিশ্বাসব্যবস্থা যা ইসলামের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। একজন মুসলিমের ঈমান বা বিশ্বাসের ভিত্তি হলো সঠিক আকীদা—যা কুরআন, হাদীস এবং সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী গঠিত।
আকীদার সংজ্ঞা
“আকীদা” শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ “আকাদা” থেকে, যার অর্থ হলো বাঁধা, দৃঢ়ভাবে ধারণ করা। ইসলামে আকীদা বলতে বোঝায়—আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব, রাসূল, কিয়ামত এবং কুদর (ভাগ্য) সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও নির্ভেজাল বিশ্বাস।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ফিকহুল আকবর-এ বলেছেন:
“আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, রাসূল, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং ভালো-মন্দ সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়।”

আকীদার গুরুত্ব
আকীদা শুধু একটি তাত্ত্বিক বিশ্বাস নয়, বরং এটি ইসলামী জীবনের ভিত্তি। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ এবং কিয়ামতের দিনে ঈমান আনো।”
— [সূরা আন-নিসা, ৪:১৩৬]
একটি সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের, কিতাবসমূহের, রাসূলদের, কিয়ামতের দিনে এবং তাকদীরের উপর—ভাল হোক কিংবা মন্দ।”
— [সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮]
অতএব, সঠিক আকীদা ছাড়া কোনো আমল কবুলযোগ্য নয়।
আকীদার ছয়টি স্তম্ভ
আকীদা বা ঈমানের মূল ভিত্তি হলো ছয়টি মৌলিক বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা:

- আল্লাহর একত্ব (তাওহীদ)
আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরীক নেই।
সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে: “বল, তিনি আল্লাহ, একমাত্র।” - ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
আল্লাহ ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরা নিরন্তর তাঁর আদেশ পালন করেন। - আবতীর্ণ কিতাবসমূহে বিশ্বাস
কুরআনসহ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ আল্লাহ মানবজাতিকে হিদায়াত দেওয়ার জন্য অবতীর্ণ করেছেন। - রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
আল্লাহ প্রতিটি জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। - কিয়ামতের দিনে বিশ্বাস
মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও আল্লাহর বিচারের উপর ঈমান রাখা। - তাকদীর (কুদর) বা ভাগ্যে বিশ্বাস
ভাল-মন্দ যা কিছু ঘটে তা আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়।
আহলে সুন্নাহর আকীদা
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ তথা সালাফে সালেহীনগণ আকীদার ব্যাপারে একটি স্পষ্ট ও ভারসাম্যপূর্ণ পথ অনুসরণ করেন। তাঁরা বলেন:

- যা কুরআন ও হাদীসে এসেছে, তা আমরা বিশ্বাস করি।
- “কিভাবে” বা “কেন” – এই ধরনের প্রশ্ন করে আল্লাহর গুণাবলীতে সন্দেহ করা বৈধ নয়।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন:
“আল্লাহর হাত, চেহারা ও অস্তিত্ব আছে যেভাবে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আমরা তা নিঃশর্তে বিশ্বাস করি; এর ব্যাখ্যা বা রূপ কেমন তা অনুসন্ধান করি না।”
এভাবেই চার ইমাম ও সালাফগণ আল্লাহর গুণাবলীকে মানব সদৃশ না করে যথাযথভাবে গ্রহণ করেছেন।
বিভ্রান্ত আকীদা ও বিপদ
ইসলামের ইতিহাসে কিছু গোষ্ঠী আকীদার সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম:
- মু’তাযিলা: তারা আল্লাহর গুণাবলী অস্বীকার করে এবং মানুষের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার উপর প্রাধান্য দেয়।
- কাদারিয়া: তারা আল্লাহর তাকদীরে বিশ্বাস করে না।
- জাহমিয়্যাহ: তারা আল্লাহর গুণাবলীকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে।
এই সব গোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা সালাফ ও কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী। তাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর দায়িত্ব হলো—এই ভ্রান্ত দলগুলো থেকে মানুষকে হেদায়াতের পথে ফিরিয়ে আনা।
উপসংহার
আকীদা হলো ইসলামী জীবনের মূল ভিত্তি। এটি শুধু জ্ঞানের বিষয় নয়, বরং একজন মুসলিমের সমস্ত আমলের ভিত্তি।
সঠিক আকীদা ছাড়া আমল কবুল হয় না, আর সঠিক আকীদা হলো কুরআন, সহীহ হাদীস এবং সালাফে সালেহীনের অনুসৃত পথ।
বর্তমানে আকীদা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালেও, প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হলো কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে সঠিক আকীদা গ্রহণ ও প্রচার করা।
সূত্র:
- ফিকহুল আকবর – ইমাম আবু হানিফা
- সহীহ মুসলিম
- তাফসীর ইবনে কাসীর
- সালাফী আলেমদের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা
আকীদা শব্দটির অর্থ হলো “বিশ্বাসে দৃঢ়তা”। ইসলামী পরিভাষায়, এটি এমন একটি বিশ্বাসব্যবস্থা যা ইসলামের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। একজন মুসলিমের ঈমান বা বিশ্বাসের ভিত্তি হলো সঠিক আকীদা—যা কুরআন, হাদীস এবং সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী গঠিত।
আকীদার সংজ্ঞা
“আকীদা” শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ “আকাদা” থেকে, যার অর্থ হলো বাঁধা, দৃঢ়ভাবে ধারণ করা। ইসলামে আকীদা বলতে বোঝায়—আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব, রাসূল, কিয়ামত এবং কুদর (ভাগ্য) সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও নির্ভেজাল বিশ্বাস।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ফিকহুল আকবর-এ বলেছেন:
“আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, রাসূল, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং ভালো-মন্দ সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়।”

আকীদার গুরুত্ব
আকীদা শুধু একটি তাত্ত্বিক বিশ্বাস নয়, বরং এটি ইসলামী জীবনের ভিত্তি। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ এবং কিয়ামতের দিনে ঈমান আনো।”
— [সূরা আন-নিসা, ৪:১৩৬]
একটি সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের, কিতাবসমূহের, রাসূলদের, কিয়ামতের দিনে এবং তাকদীরের উপর—ভাল হোক কিংবা মন্দ।”
— [সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮]
অতএব, সঠিক আকীদা ছাড়া কোনো আমল কবুলযোগ্য নয়।
আকীদার ছয়টি স্তম্ভ
আকীদা বা ঈমানের মূল ভিত্তি হলো ছয়টি মৌলিক বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা:

- আল্লাহর একত্ব (তাওহীদ)
আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরীক নেই।
সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে: “বল, তিনি আল্লাহ, একমাত্র।” - ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
আল্লাহ ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরা নিরন্তর তাঁর আদেশ পালন করেন। - আবতীর্ণ কিতাবসমূহে বিশ্বাস
কুরআনসহ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ আল্লাহ মানবজাতিকে হিদায়াত দেওয়ার জন্য অবতীর্ণ করেছেন। - রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
আল্লাহ প্রতিটি জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। - কিয়ামতের দিনে বিশ্বাস
মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও আল্লাহর বিচারের উপর ঈমান রাখা। - তাকদীর (কুদর) বা ভাগ্যে বিশ্বাস
ভাল-মন্দ যা কিছু ঘটে তা আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়।
আহলে সুন্নাহর আকীদা
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ তথা সালাফে সালেহীনগণ আকীদার ব্যাপারে একটি স্পষ্ট ও ভারসাম্যপূর্ণ পথ অনুসরণ করেন। তাঁরা বলেন:

- যা কুরআন ও হাদীসে এসেছে, তা আমরা বিশ্বাস করি।
- “কিভাবে” বা “কেন” – এই ধরনের প্রশ্ন করে আল্লাহর গুণাবলীতে সন্দেহ করা বৈধ নয়।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন:
“আল্লাহর হাত, চেহারা ও অস্তিত্ব আছে যেভাবে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আমরা তা নিঃশর্তে বিশ্বাস করি; এর ব্যাখ্যা বা রূপ কেমন তা অনুসন্ধান করি না।”
এভাবেই চার ইমাম ও সালাফগণ আল্লাহর গুণাবলীকে মানব সদৃশ না করে যথাযথভাবে গ্রহণ করেছেন।
বিভ্রান্ত আকীদা ও বিপদ
ইসলামের ইতিহাসে কিছু গোষ্ঠী আকীদার সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম:
- মু’তাযিলা: তারা আল্লাহর গুণাবলী অস্বীকার করে এবং মানুষের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার উপর প্রাধান্য দেয়।
- কাদারিয়া: তারা আল্লাহর তাকদীরে বিশ্বাস করে না।
- জাহমিয়্যাহ: তারা আল্লাহর গুণাবলীকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে।
এই সব গোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা সালাফ ও কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী। তাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর দায়িত্ব হলো—এই ভ্রান্ত দলগুলো থেকে মানুষকে হেদায়াতের পথে ফিরিয়ে আনা।
উপসংহার
আকীদা হলো ইসলামী জীবনের মূল ভিত্তি। এটি শুধু জ্ঞানের বিষয় নয়, বরং একজন মুসলিমের সমস্ত আমলের ভিত্তি।
সঠিক আকীদা ছাড়া আমল কবুল হয় না, আর সঠিক আকীদা হলো কুরআন, সহীহ হাদীস এবং সালাফে সালেহীনের অনুসৃত পথ।
বর্তমানে আকীদা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালেও, প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হলো কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে সঠিক আকীদা গ্রহণ ও প্রচার করা।
সূত্র:
- ফিকহুল আকবর – ইমাম আবু হানিফা
- সহীহ মুসলিম
- তাফসীর ইবনে কাসীর
- সালাফী আলেমদের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা